সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Ad Code

অতিথিদের সঙ্গে রাত্রিযাপনে স্ত্রীদের উৎসাহ দেওয়া হয় যেখানে


 আফ্রিকা এক রহস্যময় মহাদেশ, যেখানে এখনও এমন অনেক আদিম জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে, যারা বহির্বিশ্বের আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তি থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তাদের সংস্কৃতি ও রীতিনীতি আধুনিক সমাজের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে চমকপ্রদ ও ব্যতিক্রমী।

এমনই এক অনন্য উপজাতি হলো নামিবিয়ার হিম্বা জনগোষ্ঠী। এরা মূলত আধা-যাযাবর জীবনযাপন করে এবং নামিব মরুভূমিতেই তাদের প্রধান বসবাস। তাদের জীবনধারা যেমন বৈচিত্র্যময়, তেমনই তাদের সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতিও অত্যন্ত ব্যতিক্রমী।

অতিথি আপ্যায়ন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ভারতীয় উপমহাদেশের মতো হিম্বা উপজাতির মানুষও অতিথিপরায়ণ। তবে তাদের অতিথিপরায়ণতার ধরন বেশ ব্যতিক্রমী। তারা অতিথির আপ্যায়নের অংশ হিসেবে স্ত্রীদের অতিথির সঙ্গে রাত্রিযাপন করার অনুমতি দেন, এবং স্বামী নিজেই এতে সম্মতি প্রদান করেন। এমনকি কোনো নারী যদি এতে সম্মত না হন, তবুও তাকে অতিথির সঙ্গে রাত কাটাতে হয়, যদিও শারীরিক সম্পর্ক আবশ্যক নয়। এই রীতিকে বলা হয় ‘ওকুজেপিসা ওমুকাজেন্দু’, যার অর্থ অতিথির কাছে স্ত্রীকে অর্পণ করা। এটি তাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত একটি সংস্কার।

হিম্বা সমাজে বহুবিবাহ একটি সাধারণ বিষয়। প্রায় প্রতিটি নারীই সতীনের সঙ্গে সংসার করেন। স্বামীরা একাধিক বিয়ে করতে পারেন এবং নতুন স্ত্রীকে প্রথম স্ত্রী স্বাগত জানান। একইভাবে, নারীদের জন্যও স্বামীর বাইরে অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিধান রয়েছে, যা তাদের সমাজে কোনো নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, হিম্বা পুরুষদের প্রায় ৭০ শতাংশ এমন সন্তানের প্রতিপালন করেন, যার জৈবিক পিতা অন্য কেউ। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ও সন্তানের জন্মকে তারা সহজভাবে গ্রহণ করে।

বিয়ের রীতিও তাদের সমাজে বিশেষ গুরুত্ববহ। বিয়ের আগে বর-কনের পরিবারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়, যেখানে সাধারণত বরকে কনের পরিবারকে কিছু গবাদি পশু প্রদান করতে হয়। এটি বরপক্ষের সামাজিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

হিম্বা উপজাতির নারীদের পোশাক ও সৌন্দর্যচর্চা তাদের ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা শরীরে লাল আয়রন অক্সাইড ও পশুর চর্বি মিশ্রিত এক ধরনের প্রলেপ মাখেন, যা তাদের ত্বককে রোদ ও ধুলোবালি থেকে রক্ষা করে এবং আর্দ্রতা বজায় রাখে। নারীদের অলঙ্কারও তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। কাঠ, চামড়া এবং ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি ব্রেসলেট ও গলার হার তারা ব্যবহার করেন, যা সামাজিক অবস্থান ও ঐতিহ্যের পরিচায়ক।

বর্তমানে কুনেনে অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার হিম্বা জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করে। প্রধানত পশুপালনই তাদের জীবিকার মূল উৎস। যদিও কৃষিও তাদের জীবনের অংশ, তবে গবাদি পশু পালন তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের নারীরাই প্রধানত রান্না, ঘর সামলানো এবং শিশুদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন।

নামিবিয়ার মূলধারার সমাজ থেকে তুলনামূলক বিচ্ছিন্ন হলেও, আধুনিক সভ্যতার প্রভাব ধীরে ধীরে হিম্বাদের জীবনধারায় পরিবর্তন আনছে। নতুন প্রজন্ম প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং শহুরে জীবনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। বিদেশি পর্যটকদের আগমন এবং বিশ্বায়নের ফলে হিম্বাদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটছে, যা তাদের সংস্কৃতির এক নতুন অধ্যায় রচনা করছে।

Post a Comment

0 Comments