এলএনজি আমদানি
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) মার্কিন কোম্পানি আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে বছরে ৫০ লাখ টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য যে চুক্তি করেছে, তা চুক্তি নয়, বরং একটি ‘প্রাথমিক ধাপ’ বলে জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। তাদের মতে, এই চুক্তি দ্বারা কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়নি।
চুক্তির বিষয়ে পেট্রোবাংলা এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) কোনো তথ্য জানেন না। দুই সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিডার চেয়ারম্যানের সঙ্গে হওয়া এই চুক্তি সম্পর্কে তারা অবহিত নন এবং গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরই তারা তা জানতে পেরেছেন। তবে, জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিডা তাদের জানিয়ে ছিল যে, এমন একটি চুক্তি হতে পারে, আবার নাও হতে পারে।
এদিকে, দেশীয় জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন চুক্তি করা উচিত নয়। তাদের মতে, দেশে এলএনজি ক্রয়ের কোনো নির্দিষ্ট বেঞ্চমার্ক নেই, তাই স্বচ্ছতা না থাকলে অতীতে সরকারের মতোই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এটি একটি নন-বাইন্ডিং চুক্তি, যা কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করবে না। তিনি জানান, মার্কিন কোম্পানিটি গ্যাস এক্সপ্লোর করবে এবং এলএনজি সরবরাহ করবে, যা সময়সাপেক্ষ।
বিডার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ফেসবুকে জানান, বাংলাদেশ সরকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এনার্জি এক্সপোর্ট ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে একটি ল্যান্ডমার্ক চুক্তি সই করেছে। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ ও আমেরিকার কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ, এবং এটি বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আর্জেন্ট এলএনজি প্রতি বছর ৫০ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে পেট্রোবাংলাকে। এই চুক্তি, যা নন-বাইন্ডিং, পেট্রোবাংলার মাধ্যমে বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহে সহায়তা করবে। আর্জেন্ট এলএনজি লুইজিয়ানার পোর্ট ফোরচনে একটি অবকাঠামো তৈরি করছে, যা পরবর্তীতে এলএনজি সরবরাহের জন্য ব্যবহার হবে।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলা ও আরপিজিসিএল কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের মতামত ছাড়া এমন চুক্তি হওয়া উচিত নয়, কারণ এলএনজি ক্রয়ের জন্য পণ্যের একক ক্রেতার মতামত প্রয়োজন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে বিডা একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে এই চুক্তি করেছে, যখন সরকারী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন মন্তব্য করেছেন, এ ধরনের চুক্তি থেকে সরকারকে বিরত থাকা উচিত। তিনি বলছেন, দেশে এলএনজি কেনার জন্য কোনো স্পষ্ট নির্দেশিকা বা বেঞ্চমার্ক নেই, তাই এই চুক্তির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
0 Comments