১৫ জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার পর, প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই হামলার প্রতিবাদ জানান। তবে, ১৬ জুলাই আন্দোলনের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি আবু সাঈদ যখন নিজের জীবন উৎসর্গ করেন, তখন থেকে আর কেউ ঘরে বসে থাকেনি।
দেশ-বিদেশের প্রবাসীরা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদে অংশ নিতে শুরু করেন, এবং প্যারিসের মতো শহরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রবাসীদের জন্য সে দিনগুলো ছিল অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। দেশের ভেতরে নারী, শিশু, শ্রমিক, বৃদ্ধ—কেউই হামলা থেকে রেহাই পায়নি, এবং এমন সময় সরকারের কঠোর নীতির কারণে পরিবারে প্রিয়জনদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল। তবে, প্রবাসীরা কোনো ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়াতে মাঠে নেমে আসেন। তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে অংশ নেন এবং সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন। কিছু ক্ষেত্রে, তারা স্থানীয় আইন ভঙ্গ করেও প্রতিবাদ জানিয়ে কারাবরণ করতে দ্বিধা করেননি।
দুবাইয়ের প্রবাসীরা জানতেন যে, সেখানে এমন বিক্ষোভ নিষিদ্ধ, তবুও তারা সব ভয় উপেক্ষা করে আরব আমিরাতের মতো দেশে আন্দোলনে অংশ নেন এবং এতে কারাবরণ করেন। ফ্রান্সেও এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ছিল। শুরুতেই প্যারিসের ন্যাশনাল এলাকা এবং পরবর্তীতে রিপাবলিক, বাস্তিল ও পোর্ট দ্যু লা-ভিলেতসহ নানা জায়গায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ফরাসি নাগরিকরাও, যারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন ছিলেন। প্যারিসে সংস্কৃতিকর্মীরা প্রতিবাদী কবিতা ও গান পরিবেশন করেন, যা আন্দোলনের শক্তি আরও বৃদ্ধি করে।
এবারের জুলাই বিপ্লবের বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী প্রবাসী সংখ্যা ছিল আশ্চর্যজনকভাবে বেশি, যা পূর্ববর্তী সব বিক্ষোভকে ছাড়িয়ে গেছে। ফরাসি পুলিশও এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে কাজ করেছে, কারণ তারা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানতো।
এছাড়া, আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি ও অন্যান্য দেশে বসবাসরত প্রবাসীদের ভূমিকা ছিল অস্বাভাবিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০১৩ সালের ছব্বিশের বিপ্লবে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, এবারেও প্রবাসীরা সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’, যা ফ্যাসিস্ট সরকারের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা ছিল। অনেক বিশিষ্টজনের মতে, যদি প্রবাসীরা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করতেন, তাহলে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থান হয়তো এক শতকেও হতো না।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে, যদিও বেসরকারি হিসাব মতে, তাদের সংখ্যা দেড় কোটি ছুঁয়েছে। এসব প্রবাসী দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চিত হলেও, তারা দেশের দুর্দিনে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে সাহায্য করছেন। তাদের পরিশ্রম ও ত্যাগ দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসার এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
0 Comments