সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Ad Code

তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের আবদারে জনদুর্ভোগ


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সম্প্রতি বাদ হওয়া রাজধানীর সাত সরকারি কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগের প্রতি তাদের আপত্তি জানিয়ে কলেজটি একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করার দাবি তুলেছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আর সাত কলেজের অংশ হিসেবে নিজেদের মনে করেন না, তাই সাত কলেজ নিয়ে গঠিত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিতুমীর কলেজ অন্তর্ভুক্ত হবে না। প্রথমে ছয় দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করলেও এখন তারা এক দফা দাবি—তিতুমীর কলেজকে একটি স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে আমরণ অনশন শুরু করেছেন, এবং তাদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাস্তা অবরোধসহ বৃহত্তর কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা করছে।

তিতুমীর কলেজের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান নেননি। তবে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মন্ডল জানিয়েছেন, তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার বিষয়টি সরকারের এখতিয়ার।

এই দাবির বিষয়ে শিক্ষাবিদরা বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন। অনেকেই তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি অযৌক্তিক মনে করছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় ফেলতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ আশা প্রকাশ করেছেন, সরকারের উদ্যোগের ফলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হবে।

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে একটি রাজনৈতিক ইস্যু থাকতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন, এবং দাবি করা হচ্ছে যে, কিছু শক্তি এই ইস্যুতে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।

সরকারের নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হতে পারবেন না। এরপর সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়, এবং ইউজিসির মাধ্যমে একটি কমিটি কাজ করছে।

তবে এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে তিতুমীর কলেজের আন্দোলন আরও তীব্র হচ্ছে। গত বুধবার, সাত দফা দাবিতে আন্দোলনরত ছয় শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন, এবং বৃহস্পতিবার থেকে তারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর ফলে রাস্তা অবরোধ এবং কলেজের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক বলে আখ্যা দিয়ে তাদের আশ্বাস দেন, তবে শিক্ষার্থীরা তাদের আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারেননি এবং অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে 'তিতুমীর ঐক্য' নামের আন্দোলন সংগঠনের আহ্বায়ক নায়েক নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, তাদের একমাত্র দাবি হলো তিতুমীর কলেজকে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা। তারা সরকারের আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন এবং অবরোধ চালিয়ে যাবেন যতক্ষণ না তাদের দাবি পূর্ণ হয়।

এদিকে, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইউট্যাব) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম মনে করেন, সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগটি ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, এটি নতুন সমস্যা তৈরি করবে এবং সারাদেশের কলেজগুলোও একই দাবি তুলতে পারে।

তিতুমীর কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মনে করেন, তাদের কলেজটি ঢাকার দক্ষিণে অবস্থিত বৃহত্তম কলেজ, যেখানে শুধুমাত্র অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স হয় এবং উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ ২৭ বছর ধরে বন্ধ। তাদের মতে, তিতুমীর কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা অপরিহার্য।

এদিকে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী শরীফ উদ্দিন বলেন, সাত কলেজ নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করা উচিত, কারণ সরকার যেকোনো সময় সাত কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাঠাতে পারে।

এই পরিস্থিতি এখনও জটিল এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এটি আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে, যা শিক্ষাব্যবস্থার ওপর প্রভাব ফেলবে।

Post a Comment

0 Comments