সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Ad Code

ভারতের মদতে দুর্বিনীত হয়ে উঠছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ

 


নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ দিন দিন আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে, এবং চট্টগ্রাম এখন তাদের অপতৎপরতার নিরাপদ আশ্রয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা চট্টগ্রামকেই বেছে নিয়েছে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে চট্টগ্রামে অন্তত সাতটি মিছিল করেছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্যরা। নিয়মিত সশস্ত্র মহড়ার পাশাপাশি, তারা দেয়ালে চিকা লিখে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। অভিযোগ রয়েছে যে, ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা, বিশেষ করে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের নেতারা, ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

জুলাই বিপ্লবের পর ১৮ অক্টোবর প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় প্রকাশ্যে সশস্ত্র মিছিল বের করে ছাত্রলীগের সদস্যরা। যদিও সাধারণ জনগণ সংগঠিত হয়ে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করলে তারা পালিয়ে যায়, তবুও সংগঠনের অপতৎপরতা থেমে থাকেনি। ২৭ অক্টোবর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়, তবে এর পরও ১৭ নভেম্বর রাতে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে মিছিল বের করা হয়। একই দিনে জামালখান সড়ক ও খুলশীর জাকির হোসেন রোডেও ঝটিকা মিছিল করা হয়। ১৮ নভেম্বর সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের বিপরীতে মিছিল বের করে এবং সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক স্লোগান দেয়া হয়।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার, সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ের কাছাকাছি জিইসি মোড় এলাকায় ফের সশস্ত্র মিছিল বের করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। মিছিলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান, ইরফান উদ্দিন এবং মহানগর ছাত্রলীগের নেতা হাসনাত খান আতিফ নেতৃত্ব দেন। দীর্ঘ ১০ মিনিটের বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসীরা এলাকায় অবস্থান করলেও পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

মিছিলের ধরন
প্রত্যেকটি মিছিলই গভীর রাতে বা ভোরে সংঘটিত হয়েছে। মিছিলের আগে দুইটি নম্বরপ্লেটবিহীন মোটরসাইকেল দিয়ে এলাকায় চক্কর দেওয়া হয়, যা রেকি নামে পরিচিত। এরপর মাস্ক বা হেলমেট পরা ক্যাডাররা স্লোগান দিয়ে মিছিলে যোগ দেয়, এবং তারা বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন করে।

চট্টগ্রামের নির্বাচনী গুরুত্ব
চট্টগ্রাম শহরের জামালখান এলাকা, যেখানে প্রথম মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে শক্ত অবস্থান রয়েছে উগ্র ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের। এছাড়াও, এই এলাকার কিছু প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সদস্যদের আশ্রয় দেয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষত জামালখান, চেরাগী পাহাড়, আন্দরকিল্লা, লালখানবাজার, জিইসি, গোলপাহাড়, প্রবর্তক, মুরাদপুর, ষোলশহর ও পাঁচলাইশে এসব সংগঠনের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ছাত্রলীগের ভয়াবহ রূপ
ছাত্রলীগের ক্যাডাররা গত ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, রাহাজানি ও নানা অপরাধে জড়িত। জুলাই মাসে তারা পুলিশের পাহারায় অন্তত ছয়জনকে হত্যা করেছে এবং প্রায় ৩০০ আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হামলা করে আহত করেছে।

রাজনৈতিক বিভাজন ও ছাত্র আন্দোলন
জুলাই বিপ্লবের পর, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একত্রিত হলেও সরকার পতনের পর তারা নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং বেড়েছে, যার ফলে তারা একত্রিত হতে পারেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও একজোট না হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা
গোয়েন্দা সংস্থার মতে, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের পেছনে বড় রাজনৈতিক শক্তির আড়াল রয়েছে। তাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে কিছু প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং কিছু এলাকায় তাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

প্রশাসনের উদাসীনতা
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। পুলিশ কখনো কখনো কিছু লোককে গ্রেপ্তার করলেও, তাদের বিরুদ্ধে কোনো নতুন মামলা দায়ের করা হয়নি, এবং তারা পুরোনো মামলায় জামিন পেয়ে যায়। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যাহত রয়েছে।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের বেশিরভাগই বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। তারা ভারতে বসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে, এবং তাদের নির্দেশে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে।

সংগঠনগুলোর অবস্থান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা গত বৃহস্পতিবার অনশন কর্মসূচি পালন করেন। তাদের দাবি ছিল ছাত্রলীগের অপতৎপরতা বন্ধ, জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের ফাঁসি, এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিচারের।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও তারা বিভিন্ন সময়ে মিছিল বের করার চেষ্টা করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারও হয়েছেন।

এই পরিস্থিতি শহরের সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ সৃষ্টি করছে, এবং প্রশাসনের অপ্রতুল কার্যক্রমের কারণে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

Post a Comment

0 Comments