গোয়েন্দা পুলিশের হাতে নির্যাতন ও বন্দী জীবন: মুফতি নাছির উদ্দিন খানের অভিজ্ঞতা
২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি গাজীপুরের ভবানীপুর বাজারে একটি ওয়াজ মাহফিলে অংশ নেওয়ার পর মুফতি নাছির উদ্দিন খান গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। মাহফিল শেষে বাসায় ফেরার পথে তাকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা গাড়িসহ গুম করে নিয়ে যায়। চার দিন গুমের পর ক্রসফায়ারের হুমকি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তাকে পরে হেফাজতের পুরনো একটি মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এই সময়ে পরিবারের সদস্যদেরও ভয়ভীতি ও চাপের মুখে পড়তে হয়। জামিন পাওয়ার জন্য গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে নানা প্রস্তাব দেওয়া হয়, যার মধ্যে রাজনীতি ছাড়ার দাবি ছিল। তার এই বন্দী জীবন প্রায় পৌনে চার মাস চলতে থাকে, যেখানে তাকে সরকারের নিপীড়নের শিকার হতে হয়।
মুফতি নাছির উদ্দিন খান, যিনি গাজীপুর জেলার হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিতে গিয়েছিলেন যখন তাকে আটক করা হয়। মাহফিলের পর সাদা পোশাকধারী পুলিশ তাকে ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতে গতিরোধ করে এবং মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে লাঠি, বৈদ্যুতিক তারসহ নির্যাতনের জিনিসপত্র দিয়ে নির্যাতন করা হয়।
চরম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করার পর তার কাছে রাজনীতি ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই সময় তার পরিবারের সদস্যরা গাজীপুর থানা, এসপি অফিস, সিটি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে সাহায্য চেয়েও কোন ফল পাননি। একপর্যায়ে তাকে পল্টন থানায় হেফাজত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়, এবং আদালতে রিমান্ডের জন্য পাঁচ দিনের আবেদন করা হয়।
বিচারের সময় মুফতি নাছির উদ্দিন তার অবস্থান ও মর্যাদা তুলে ধরেন, তবে তাকে এক দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। জেলে তাকে ২৪ ঘণ্টা লকআপে রাখা হয় এবং এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। মুক্তির পরেও তিনি গোয়েন্দাদের নজরদারি ও হয়রানির শিকার হন, এবং তার পরিবারকেও অস্বস্তির মধ্যে রাখা হয়।
শেষ পর্যন্ত, পৌনে চার মাসের পর আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে তার ৭৫ বছর বয়সি বাবা স্ট্রোক করেন এবং মুক্তির পরও তার উপর নানা রকম চাপ চলে।
মুক্তির পর ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, এবং তার ব্যবসা ও মাদরাসাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার শ্বশুরকেও নানাভাবে হয়রানি করা হয়। এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে তাকে সরকারের পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
0 Comments