শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে ১৪ দিনব্যাপী মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে শুরু হওয়ার কথা ছিলো ‘ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব’-এর। সব আয়োজনও চূড়ান্ত ছিলো। কিন্তু শেষ সময়ে এসে জানা গেল, হুমকির অভিযোগে স্থগিত হয়েছে এই উৎসব।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মহানগর নাট্য পর্ষদ জানিয়েছে, বাংলাদেশের থিয়েটার আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। কথা ছিল, শত দর্শক ও নাট্যকর্মী শনিবার যৌথভাবে ১৪ দিনব্যাপী ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব ২০২৫ উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে গত দুই মাস ঢাকার ৮৫টি নাট্যদলের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে, গণ–অর্থায়নে যখন উৎসবের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন, ঠিক তখন আমাদের জানানো হলো, উৎসব বন্ধ করতে হবে। গতকাল বেলা একটার সময় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাদের জানান যে রমনা থানা থেকে ফোনে নাট্যোৎসব বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমরা উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। সন্ধ্যায় আমরা ওসি সাহেবের সঙ্গে আমরা তার অফিসে সাক্ষাৎ করি এবং উৎসবের বিস্তারিত তথ্য তাকে অবহিত করি; যদিও এ ধরনের আয়োজনের জন্য পুলিশ বা সরকারের কোনো অনুমতির নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আলোচনার পর ওসি সাহেব আমাদের আশ্বস্ত করেন এবং আমরা নিরাপত্তা সহযোগিতা চেয়ে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়ে চলে আসি।
ঢাকা
মহানগর নাট্য পর্ষদের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে,
থানায় নিরাপত্তা সহযোগিতা চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর একটি
মব থানার মধ্যে ঢুকে একরকম হুমকির স্বরে গালাগালসহ মহিলা সমিতির সংশ্লিষ্ট
কর্মকর্তাকে উৎসব বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মহিলা সমিতির
কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতেই মৌখিকভাবে
আমাদের হল বরাদ্দ বাতিল করে।
পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার রাতে কে বা কারা অন্ধকারে মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তন থেকে উৎসবের সাজসজ্জা খুলে নিয়ে যায়। এরপরও নাটকের স্বার্থে আমরা ওসির সাথে আলোচনা করি। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ও ভালোবাসায় আয়োজন করা প্রাণের নাট্যোৎসব আপাতত স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হচ্ছি।
নাট্যকর্মী
ও নাট্যপ্রেমীদের উদ্দেশে এই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, নাট্যশিল্পী আমাদের
পরিচয় হলেও আমরা রাজনৈতিক সচেতন মানুষ। কিন্তু আমরা যখন থিয়েটারে আসি, তখন
আমাদের পরিচয়, আমরা শিল্পী। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নাটকের মাধ্যমে আমরা
মানুষের কথা বলি। আজকের এই অনাকঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ
করছি। আমরা আশাবাদী, ঈদের ছুটির পর আবারও আমরা আসব নাটক নিয়ে আপনাদের
সামনে। আপনারা আমাদের সাথে ছিলেন, আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। কারণ, দর্শকেরাই
আমাদের স্বজন, দর্শকেরাই আমাদের প্রেরণা। ভালো থাকবেন। দেখা হবে থিয়েটারে।
0 Comments