সর্বশেষ

6/recent/ticker-posts

Ad Code

হলে কোরআন পোড়ানো ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার

 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হল থেকে পোড়া কোরআন শরিফ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় পুলিশ এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থী মো. ফেরদৌস রহমান ফরিদ (২২), ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের মো. মজিবর রহমানের ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র।

মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, সাইবার ক্রাইম ইউনিট ফেরদৌসকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে পালিয়ে বিভিন্ন স্থানে, যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, ঢাকা ও ময়মনসিংহে আত্মগোপন করেন।

১২ জানুয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আমির আলী হলের মুক্তমঞ্চ, শহীদ জিয়াউর রহমান হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল, মাদার বখস হল, মতিহার হল, সোহরাওয়ার্দী হল এবং শেরেবাংলা একে ফজলুল হক হলের মসজিদের মেঝেতে এবং শেলফে পোড়া কোরআন শরিফ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মতিহার থানায় মামলা দায়ের করে।

পুলিশ জানায়, থানার পাশাপাশি মহানগর পুলিশের সিটিটিসি, সাইবার ক্রাইম ইউনিট তদন্ত শুরু করে। সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনাটির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা জানা যায়।

এরপর রাজশাহীর একটি সমন্বিত দল, ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহায়তায় ফেরদৌসকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, "গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কিনা, তার রাজনৈতিক পরিচয় এবং এই ঘৃণ্য কাজের উদ্দেশ্য কী ছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে।

বেশ কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেছেন যে, গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থী মো. ফেরদৌস রহমান ফরিদ শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং কোরআন পোড়ানোর ঘটনা সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে, হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষ মনে করেন যে, এই ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তৈরির জন্য ঘটানো হয়েছে। তাদের দাবি, কোরআন পোড়ানোর মতো ঘৃণ্য কাজটি একটি ভয়াবহ ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা হতে পারে, যার মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে শিবিরের রাজনৈতিক কার্যকলাপ লক্ষ্য করে আসছিলেন। তাদের ধারণা, ফেরদৌস শিবিরের একজন সক্রিয় কর্মী, এবং এই ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার কাজ তাদের দলের কর্মসূচির অংশ হতে পারে। তারা আরও বলছেন যে, এই ঘটনার পেছনে যেসব উদ্দেশ্য থাকতে পারে, তা শুধুমাত্র মুসলিম হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈরিতা তৈরি করা এবং দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করা।

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকও এই অভিযোগের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। তারা মনে করেন যে, এই ধরনের ঘটনার মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনকে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক উসকানি দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, যা দেশের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য বিপদজনক।

এছাড়া, স্থানীয় এলাকাবাসীও এই ঘটনার পিছনে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য খুঁজে পাচ্ছেন। তাদের মতে, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় মুসলিম ও হিন্দু শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, এবং তারা মনে করেন, কোরআন পোড়ানোর ঘটনাটি এই উত্তেজনা আরও বাড়ানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন এই অভিযোগগুলি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং তদন্তে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানায়, তারা ঘটনাটির সব দিক খতিয়ে দেখছে এবং যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে তারা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং এমন কোনো কার্যকলাপকে সমর্থন করবে না, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

Post a Comment

0 Comments